গণশক্তি ডেস্কঃ
পোশাক শিল্পের তালিকায় বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে উপরের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব কারখানার শ্রমিকদের অত্যধিক গরমে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ বহুজাতিক কোম্পানি ও নামীদামী ব্র্যান্ডগুলো এসব সমস্যা এড়িয়ে যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইন্ডিটেক্স, এইচ অ্যান্ড এম ও নাইকির মত ব্র্যান্ড তাদের সাপ্লায়ার কারখানা ও শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য আইনগতভাবে দায়বদ্ধ।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানিয়েছেন- ২০২০-২৪ সময়কালে ঢাকা, হ্যানয়, হো চি মিন সিটি, নম পেন ও করাচির ‘ওয়েট-বাল্ব’ তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ২০০৫-০৯ সালে ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘ওয়েট-বাল্ব’ বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা হিসাব করার একটি পরিমাপক। তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রী ছাড়িয়ে গেলে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন শ্রমিকদের শরীরের তাপমাত্রা নিরাপদ মাত্রায় রাখতে কাজের সমপরিমাণ বিশ্রামের সুপারিশ করে থাকে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, নাইকি, লিভাইস ও ভিএফ- এই তিন রিটেইলারের ‘সাপ্লায়ার কোড অফ কন্ডাক্ট’এ তাদের শ্রমিকদের অত্যধিক গরমে কাজ করা থেকে বিরত রাখার প্রোটোকল রয়েছে।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জেসন জাড বলেন, তারা বেশ লম্বা সময় ধরে এসব বিষয়গুলোর ওপর ব্র্যান্ডগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। তবে ব্র্যান্ডগুলো শুরুতে বিষয়গুলোতে তেমন আমলে নেয়নি। এখন ধীরে ধীরে তারা এদিকে নজর দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নতুন আইনবিধি অনুযায়ী যদি ব্র্যান্ড অথবা রিটেইলার জানে যে তাদের শ্রমিকরা অত্যধিক তাপমাত্রায় কাজ করছে যা তাদের শরীরের ক্ষতিসাধন করছে, তাহলে তারা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য।
ইইউ-র আইনবিধি ‘কর্পোরেট সাসটেইনেবলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডাইরেক্টিভ’ ২০২৭ সাল থেকে বড় বড় কোম্পানির ওপর আরোপ করা হবে।
কারখানায় সহনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখতে শক্তি-ব্যয়ী ও ব্যয়বহুল এয়ার কন্ডিশনিং এড়িয়ে বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা উন্নতিকরণ ও বাস্পীভবন শীতলীকরণ ব্যবস্থার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। এভাবে কার্বন নির্গমন কমানো যেতে পারে।
জাড বলেন, অত্যধিক গরমে শ্রমিকদের কার্যক্ষমতা কমে আসায় বেশ কিছু কারখানার মালিকরা এই উপায় অবলম্বন করতে ইচ্ছুক। তবে ইইউ’র নিয়মবিধি অনুযায়ী ব্র্যান্ডগুলোকেও এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।
প্রতিবেদনে রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলোকে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। যেন শ্রমিকরা অসহনীয় তাপপ্রবাহের সময় কাজ থেকে ছুটি নিতে পারে।
উল্লেখ্য, শ্রোডার্স ও গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউট ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছিলো, অত্যধিক গরম ও বন্যায় বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক শিল্পে ৬৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সূত্র: রয়টার্স