মোঃ সাবিউদ্দিন: হুমগুটি হল ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় লক্ষ্মীপুরের বড়ই আটায় তালুক-পরগনার সীমানায় অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের জমি পরিমাপের বিরোধের মীমাংসা করতে আয়োজন হয়েছিল এই খেলার। পরবর্তীতে আমন ধান কাটা শেষ, বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এই পাতানো খেলা চলছে আড়াইশো বছরেরও অধিক সময় ধরে।
হুমগুটি হচ্ছে একটি পিতলের তৈরি ৪০ কেজির গোলাকার বল। এ বল নিয়ে মাঠে লাখো মানুষের কাড়াকাড়ি হয় এর দখল নিয়ে। সবার মুখে উচ্চারিত হয় “জিতই আবা দিয়া গুটি ধররে হেইও।
সাধাররণত ফাল্গুনে আমন ধান ও তৎপরবর্তী রবিশস্য তোলার পর চৈত্রের শেষে অথবা প্রথমে ফসলবিহীন দিগন্ত বিস্তির্ণ তৃর্ণ খোলা প্রান্তরে এ খেলা জমে উঠে। প্রধানত গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া কৃষাণ পরিবার সুস্থ্য, সবল, সাহসী যুবক থেকে শুরু করে প্রাকপ্রবীণ বযসীরাই এ খেলায় অংশ গ্রহন করে। খেলায় থাকে একটি মাত্র অদ্ভুদ উপকরণ। বৃহদাকার পিতলের কলসির গলার নিচের গোলাকার যে অংশ ঠিক সেরকমের একটি অংশের ভিতরে এমনভাবে মাটি ঠেসে ভরা হয় যে, মুখ বন্ধের পর তাতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েও মাটি বের করা যায় না।এটি দলগত খেলা।
২৫০ বছর আগে মুক্তাগাছার রাজা শশীকান্ত আচার্য্যের সঙ্গে ত্রিশালের বৈলরের জমিদার হেমচন্দ্র রায়ের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তখনকার দিনে তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে। একই জমিদারের জমিতে দুই নীতির কারণে প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু হয়। এই বিরোধ মীমাংসা করার জন্য লক্ষ্ণীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে ‘তালুক-পরগনার সীমানায়’ এই গুটি খেলার আয়োজন শুরু করা হয়। গুটি খেলার শর্ত ছিল গুটি গুমকারী এলাকাকে ‘তালুক’ এবং পরাজিত অংশের নাম হবে ‘পরগনা’। মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হয় জমিদার আমলের সেই গুটি খেলায়। স্থানীয় মোড়ল পরিবার বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে এই খেলার আয়োজন করে আসছে।
পৌষ মাসের শেষ দিনকে এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় পুহুরা। এই দিনেই যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই খেলা। বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয় এই খেলা। খেলা চলে বিকেল থেকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক আলী উবায়েদ ইমন
WhatsApp +880 1766-915006
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫